যা বলা হয়নি ।
সেদিন প্রথম পরিক্ষা ছিলো জেএসসি ২০১৫ সাল বাংলা পরিক্ষা দিয়েই সাধারনত পরিক্ষা শুরু হয় স্কুলের । আগের রাতে ১২টা পর্যন্ত পড়ে প্রায় চার বার বই রিভাইজ দিলাম। সকাল ভোরে উঠে লিখতে বসলাম। লিখছিলাম প্রেম পত্র। অনেক অপেক্ষা করেছি ভাবছি সাহস করে এবার লিখেই ফেলবো আর দিবো ও। লিখলাম ঠিক কি লিখেছি এই মুহুর্তে মনে নাই তবে আমি ছোট থাকতেই কবিতা গল্প লেখার অভ্যাস ছিলো তাই খুব কবিত্বপূর্ণ লেখাই লিখেছিলাম মনের মাধুরী আর বুক কাপা নিয়ে। যেই ইতি লিখতে যাবো আপু পিছন থেকে কাধে হাত দিলো হতবাক হয়ে তাকালাম ভাবছি আমি শেষ। চিঠিটা হাতে নিয়ে বলল লেখা খুব মানসম্মত হয়েছে তো কাকে দিবি ওই মেয়েটাকে নাকি। চুপ করে রইলাম বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আপু বুঝতে পারছে আমি অসহায় হয়েগেছি। খানিকটা চুপ করে বলল দিয়ে দিছ তবে আজ নয়।
প্রথমবার প্রপোজ করলে মেয়েরা একটু ভাব নেয় আর ভাব নিলে তুই মন খারাপ করবি। শেষ পরিক্ষার দিন দিবি ওর মন ও ভালো থাকবে আর সহজে রাজি হয়ে যাবে। আপুর কথায় হা বললাম চিঠিটা আপুর কাছেই রাখলো। পরিক্ষা দিলাম ভালোই হলো সব পরিক্ষা। পরিক্ষায় ঠিকই ভালো রেজাল্ট করলাম আর পাশ করলাম কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি জীবনে হাসিমুখ থাকাটা । পরিক্ষা শেষের দিন আপু চিঠিটা দিয়ে বললো এই নে আজ দে তবে পরবর্তীতে আমি যেমনটা বলব ঠিক তেমনটাই চলতে হবে। চিঠি নিলাম না চোখ দিয়ে পানি টলমল করছিলো আর বললাম এটার দরকার শেষ এটা বলে দ্রুত বের হয়ে গেলাম। তখন আপুকে বলতে পারিনি সে কারো সুরে গলা মিলিয়ে ভালোবাসি বলে দিয়েছে। আমার ভালো থাকাটা শেষ। তার পর আর ২মাস সহপাঠী কারো সাথে যোগাযোগ করিনি। কাজ শিখেছি, কাজে ব্যাস্ত থেকেছি, কলকাতায় খালার বাসায় বেড়াতে এসেছি। তারপর রেজাল্ট দিলো আপুকে বললাম আপু আমি এখানে পড়বো না। আমি অন্য কোথাও পড়বো। আপু জিজ্ঞেস করেছিলো এখানে সমস্যা কি আপু আমাদের সংসারে অন্যতম একজন তাই সিদ্বান্ত নিতে পারত তাই পুরো বিষয়টা বলেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলো সেদিন কেনো আর চিঠিটা নেই নাই। আপু ক্ষমা চাইছে আমার কাছে আর বলছে এমন কিছু করো যাতে সে এসে নিজ থেকে বলে আর তুমি সেদিন তাকে ফিরিয়ে দিবে।
সবাই রাজি হলো আমি ঢাকার বয়েজ স্কুলে পড়বো। আমার টিসি আর প্রশংসা পত্রের জন্য কাকা স্কুলে গেলো কিন্তু আমার স্যারেরা আমাকে ছাড়তে চাইলো না আমার কাকাও রাজি হলো। কি আর করা আমার বাবা নেই তাই কাকার উপর কথা বলার অধিকারো নাই তাই শর্ত জুরে দিলাম যাতে আমাকে স্কুলে যেতে বাধ্য করা না হয়। তার পর আর কি বিগত বছর গুলোতে যেখানে আমি সবচেয়ে বেশি উপস্থিতির জন্য পুরস্কার পেতাম সেখানে অনিয়মিত হিসেবে ক্লাস করেছি। নিজের ইচ্ছা মতো পড়েছি। তবে ক্লাসে যেতাম ঠিকিই বুকের ভিতর আগুনের ফুলকি জ্বলে উঠত। শুরু হয়ে গেলো কষ্টময় অধ্যায়। যা বলা হয়নি। ভালোবাসি।
একটি চটপটে আর অচেনা সকাল স্কুলের বারান্দায় দাড়িয়ে লম্বা হওয়ার চেষ্টায় বারান্দার চালায় ঝুলছি আর অচেনা সব নতুক মুখ দেখে অভাক হচ্ছি। আমি যেহেতু এখানে তৃতীয় শ্রেনী থেক। পড়ছি তাই পুরাতন ছাত্র হলেও ষষ্টশ্রেণীতে নতুন ছাত্র ভর্তী হওয়ায় এমনটা হয়েছে চারিদিকের নানান বিদ্যালয় থেকে নতুনদের আগমনে পুরো বিদ্যালয় যেনো আমার কাছে নতুন লাগছে। শুভপুর আর নন্দীপাড়া থেকেই বেশিরভাগ ছাত্রের আগমন। এরি মধ্যে নতুনদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠলো শায়নের সাথে। ভালো লাগে ছেলেটাকে। প্রতিদিন ক্লাস করতো বলে আমার আরো বেশি ভালো লাগতো। সারাদিন ওর সাথেই উঠা বসা। একদিন সকালে ওর সাথে বাহির হচ্ছিলাম তখন ঠিক মনে আছে বৈশাখ মাস, কাচা আম নিয়ে মাতামাতি চলছিলো। স্কুলের গেইটটি আমার শিক্ষাদিনের প্রথমে যেমন ছিলো তেমনি আছে ৩ বছর পরেও। গেইটের বাহির পা দিতে যাবো ঠিক তখনি আগমন ঘটলো এক মানবের যার মানবীয় সৌন্দর্য বর্ননা করলে আমার ক্রান্তিকাল ঘটবে।
হা করে তিন নজর দেখার প্রয়োজন হলো। বাহির থেকে ঘুর দিয়ে ঘন্টা বাজার সাথে সাথেই ক্লাসে হাজির। ক্লাসে গিয়ে আরো অবাক সেই অসাধারন সৌন্দর্যময় মানবটি আমার সহপাঠিনী। রীতিমত হা করে বার বার তাকাতে হয়েছে তার দিকে। বহুবার দেখেও যেন তৃষ্ণা মিটে না। ব্যাপারটা একদিনেই ক্ষান্ত হতে পারত কিন্তু না কাকতালীয় ভাবে অজান্তেই তার দিকে চোখ চলে যায়। এমন মনে হচ্ছে যেন সারাজীবন দেখলেও চোখের ক্ষুধা মিটবে না। অন্য কেউ না বুঝলেও আমার তাকিয়ে থাকাটা শায়ন খুব ভালোভাবেই আচ করতে পেরেছে। একটু মজারছলে বলল কাহিনী কি আমার খালাতো বোনের দিকে কি দেখছো হা করে । আমি : তোর খালাতো বোন নাকি তা ভালো খুব সুন্দর। তাইলে আজ থেকে আমারে দুলাভাই ডাকবি।
যেই মুখ দিয়ে সেই কাজ বেচারা নাছোর বান্দা শুধু ক্লাস নয় যেখানে যার কাছে পেরেছে খবরের হেডলাইন ছাপাইছে।
এভাবেই কেটে গেলো ২ টি বছর ওই মায়া সুপ্ত চেহারা প্রতিদিনের শুরু আর শেষে ভালো কেটে যাচ্ছিলো তার পর পরিক্ষা আসলো আর বাস্তবিক জীবনের শুরু করলাম।