ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৬ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেবীদ্বারে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ

দৈনিক কুমিল্লার ডাক
মার্চ ১৬, ২০২৩ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ । ১২৯ জন
বিক্ষুব্ধ জনত,পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে মোটরসাইকেল পুড়ানো ও আহতদের ছবি

পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত অর্ধশত

মোঃ বিল্লাল হোসেন,দেবীদ্বার প্রতিনিধিঃ

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনকে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক ও মেয়ের জামাইরসহ ২ টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতা। ওই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলিতে ১৫ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়।

(১৫ মার্চ) বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০/১২ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩ টায় দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, ছাএীর পিতা বাদী হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা ও পুলিশের উপর হামলার বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে ১০ জনকে এজাহার ভুক্ত ও ১৫০/২০০ অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়। তবে আহত সাত পুলিশের মধ্যে গুরুতর আহত দুই পুলিশকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক সহ গ্রেফতারকৃতদের প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নেয়া হচ্ছে।

জানা যায়, বুধবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে প্রথমে প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেন তার অফিস কক্ষে দশম শ্রেণির একছাত্রীকে ঢেকে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং দ্বিতীয় দফায় সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় প্রতিষ্ঠানের একটি শ্রেণিকক্ষে তিনি ছাত্রীর সাথে একই কাজ করেন। ওই ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠীরাসহ তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগীতায়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতারা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের দরজা-জানালা এবং বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ভাঙচুরের চেষ্টা করে এলাকাবাসী।

প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনকে রক্ষায় তার পক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত, নাঈম খন্দকার, মো. নাঈম ও জিহাদুল ইসলাম জানায়, প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। আহতরা সবাই ওই স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র। ছাত্রদের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক দেবীদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।

সংবাদ পেয়ে বুধবার বিকেলে দেবীদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং রাতে স্কুল ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়লে অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় ৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা চকলেট বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং স্কুলের দরজা জানালা ভাঙচুর করে।

রাত আনুমানিক পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে অবরুদ্ধ থাকা প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করতে দেখা যায়। এসময় ডিবি পুলিশসহ তিন পুলিশকে আটক করে মারধর করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখে। রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ তাকে উদ্ধারে এলাকায় অভিযান চালায়। ওই সময় রাত ১০টা পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

এদিকে রাতে পুলিশের রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলিতে আরো অন্তত ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬) আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। এদের প্রত্যেকেকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ সাতজন পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা যায়।