কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউপি’র মরিচা হোসেনপুর গ্রামের মোঃ মোখলেছুর রহমান, মোঃ জাকির হোসেন ও মোঃ এনামুল হক সুমনকে সুইচ গিয়ার, রামদা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগ উঠেছে পার্শ্ববর্তী বেতোরা গ্রামের কিশোর গ্যাং লিডার ও বিএনপির শীর্ষ সন্ত্রাসী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে । সন্ত্রাসী হামলার পর মরিচা ও বেতোরা গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর হাতে আটক সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন বাহিনীর সদস্যকে দেবীদ্বার থানা পুলিশে সোপর্দ করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত ঘটে রাজামেহার ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৌসুমী ভৌমিক এর বিরুদ্ধে সার ও বীজ দেওয়ার জন্য কার্ড বাবদ টাকা নিয়াছে বলিয়া ইউপি সদস্য ইয়াসমিন সিদ্দিকী কে বাদী করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করায় ইয়াসমিন সিদ্দিকীর চাচা সালাউদ্দিন।
অভিযোগের পর তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তে বেতোরা গ্রাম ও রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন সরকার এর কার্যালয়ে গেলে মরিচা সরকার বাড়ীর মোকলেছ মিয়াকে সাক্ষী দেওয়ার কথা বললে তিনি তার নিকট থেকে সার ও বীজের কার্ড বাবদ কোন টাকা নেয়নি বলে জানায় তদন্ত কর্মকর্তাদের। তখন থেকেই মোখলেছের উপর চড়াও হয় নারী ইউপি সদস্য ইয়াসমিন সিদ্দিকী ও তার চাচা সালাউদ্দিন বাহিনী।
০৪ ই এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকাল ১০:৩০ মিনিটের সময় বেতোরা ইনোভেটিভ ইন্টারন্যাশনাল কেজি স্কুলের সামনে মোকলেছ কে পেয়ে অভিযোগ পএে স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর না দেওয়ায় অভিযুক্ত সালাউদ্দিন, ইউপি সদস্য ইয়াসমিন আক্তার ও তার স্বামী আবু বকররা গালিগালাজ শুরু করে একপর্যায়ে সালাউদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে মোখলেছ মিয়াকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি এবং লাথি মেরে আহত করে। আশে পাশের লোকজন এসে বিষয়টি মীমাংসা করে দিলেও এর জের ধরে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী সালাউদ্দীনসহ তার লালিত পালিত কিশোর গ্যাং লিডার টেগরা আশ্রাফুল বাহিনী এবং বহিরাগত প্রায় ৩৫/৪০ জন সন্ত্রাসী হাতে সুইচ গিয়ার,রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে সন্ধ্যা ০৬:৪০ মিনিটের সময় পুনরায় মোখলেছ মিয়ার বাড়িতে ও মরিচা ছায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে রাস্তার উপর হামলা চালিয়ে মোকলেছের ভাই মোঃ এনামুল হক সুমন ও জাকির হোসেনকে তোলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম করার সময় এলাকাবাসী সবাই ধাওয়া দিয়ে সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন বাহিনীদের একজন বহিরাগত সন্ত্রাসী পার্শ্ববর্তী চান্দিনা থানার নাওতলা গ্রামের কুঁড়াইন্না বাড়ীর মোঃ কামাল হোসেনের ছেলে মোঃ আতিকুর রহমান কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
স্হানীয়রা আহত এনামুল হক সুমন ও জাকির মিয়াকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
এ ঘটনায় মোঃ মোখলেছুর রহমান বাদী হয়ে সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন, আবু বকর ও নারী ইউপি সদস্য ইয়াসমিন আক্তারসহ ০৮ জনকে এজাহারভুক্ত করে মোট ৩৮ জনকে আসামি করে দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দেবীদ্বার থানার মামলা নং-০৬, জিআর- ৭৫/২০২৩ ইং ধারা- ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৫০৬ পেনাল কোড। পরে মামলার ০৮ নং আসামি মোঃ আতিকুর রহমান কে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার বাদী আরো জানান,আমার মামলার ৩ নং আসামী নারী ইউপি সদস্য মোসাঃ ইয়াসমিন আক্তার ইউনিয়ন পরিষদে “জন্ম নিবন্ধনে অতিরিক্ত ফি আদায়” নামক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তার চাচা সন্ত্রাসী সালাউদ্দিনের হুকুমে তার লালিত-পালিত কিশোর গ্যাংয়ের লিডার আমার মামলার ৫ নং আসামি আশ্রাফুল প্রকাশে ট্যাগরা আশ্রাফুলের সন্ত্রাসী বাহিনীরা গত ০৪-১২-২০২২ ইং তারিখে রাজামহার গ্রামের সাংবাদিক বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার বড় ভাই জালাল মিয়াকে রামদা ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করায় তার বিরুদ্ধে দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
দেবীদ্বার থানার মামলা নং- ০৬,জিআর-২৬৭/২২ইং ধারা-১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৪২৭/৫০৬/১০৯ পেনাল কোড। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দেবীদ্বার থানায় আরোও একটি মামলা আছে। মামলা নং ০৫,জিআর-১৪১/২১ ইং ধারা-১৪৩/১৮৬/৩২৩/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোড সেই মামলার এজাহারেও সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন অভিযুক্ত আসামী। এই সন্ত্রাসী সালাউদ্দিনের ভয়ে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করলে তাকে একাধিক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয় এবং তার অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষরা অতিষ্ঠ। প্রশাসনের নিকট তার বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে রাজামেহার ইউপি উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মৌসুমী ভৌমিক এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারবো না আমি সরকারি চাকরি করি আমার উপরের স্যারের নিষেধ আছে। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্তাধীন আছে। আপনি চাইলেও আমি কিছু বলতে পারবোনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালাউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, মামলার এজাহার পেয়েছি । এক জন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকি আসামিদেরকে ও গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।