কুমিল্লার ৭০ শতাংশ পানি নিষ্কাশনের প্রধান কান্দিখালটি টমছমব্রীজ থেকে কচুয়া চৌমুহনী পর্যন্ত ভরাট করে কুমিল্লা-নোয়াখালি ৪ লেন রাস্তা নির্মানের কারনেই পানিবন্দি নগরবাসী। এর ফলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা কাজে আসছে না জলাবদ্ধতা নিরসনে। মাত্র তিন ঘন্টার টানা বৃষ্টির পানিতে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত।

ছবি সংগৃহিত।
তলিয়ে গেছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কসহ অলি-গলির রাস্তাঘাট। নগরীর অধিকাংশ সড়ক ডুবে গেছে হাঁটু পরিমাণ পানির নিচে আবার কোথাও তারও বেশি। বাড়িঘর-দোকানপাটের ভিতরেও ঢুকে পড়েছে পানি। নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। জলাবদ্ধতার কারণে নগরের রাস্তায় চলাচল করার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কর্মজীবি নারী-পুরুষ, রোগী ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন। রোববার (৪ এপ্রিল) নগরীর অধিকাংশ সড়কের চিত্র ছিল এমন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকার বাড়ি-ঘরে এবং অলিগলির দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়েছে এবং অনেকের আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নষ্ট হয়ে গেছে পানিতে। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা এবং নোংরা দুষিত পানি এখন রাস্তার উপর থৈ থৈ করছে।
বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়েছেন নগরীর গুরুত্বপূর্ণ লাকসাম সড়কের মনোহরপুর, দক্ষিণ চর্থা, উত্তর চর্থা, টমছমব্রিজ, শাকতলা, গোবিন্দপুর, বিসিক শিল্পনগরী, ঝাউতলা, রেইসকোর্স, কাঠেরপুল, কান্দিরপাড় টাউন হল মাঠ, স্টেডিয়াম, বজ্রপুর রোড, ছাতিপট্টি, চকবাজার, থিরাপুকুর পাড়, নজরুল এভিনিউ, ডিসি রোড, ছায়াবিতান, মুরাদপুর, বাগিচাগাঁও, ইপিজেড রোড, সরকারি মহিলা কলেজ রোড, ঠাকুরপাড়া বৌদ্ধমন্দির রোড, কালিয়াজুরিসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। নগরীর কুচাইতলী এলাকার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাস ও ভেতরের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ে রোগী ও সংশ্লিষ্টরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ছবি সংগৃহিত।
নগরীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম মনোহরপুর শিক্ষাবোর্ড এলাকা থেকে শাকতলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয়ের সামনে দিয়ে জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিটাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে পড়েছে। এ সড়কের পাশের খালের ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত দূষিত পানিতে সড়কটি একাকার হয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহন সংকটে পড়ে অনেকে হাঁটু পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন ভাঙ্গা রাস্তার গর্তে পড়ে ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন উল্টে যেতে দেখা গেছে। এতে নগরবাসীর জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নগরীর ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুমিল্লা-নোয়াথালি ৪ লেন রাস্তা নির্মান করতে গিয়ে টমছমব্রীজ থেকে কচুয়া চৌমুহনী পর্যন্ত কান্দিখাল ভরাট অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, নকশা বহির্ভূত বহুতল ভবন ও বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তা ও ড্রেনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ, সরু পরিসরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে একেবারে ধীরগতিতে পানি নিষ্কাষন হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা অনেকটা স্থায়ী রুপ নিয়েছে।
এক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে দাবি করেন অনেকে। কুমিল্লা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, জলাবদ্ধতা নগরবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ভোগের যেনো শেষ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে এ অভিশাপ থেকে নগরবাসীর মুক্তির কোনো উপায় নাই বলে মনে করেন তিনি। কুমিল্লা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভূঁইয়া কুমিল্লার ডাককে জানান, ভোর (রবিবার) ৬টা থেকে ৩ ঘন্টায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লার ডাককে বলেন, নগরীতে পর্যাপ্ত ড্রেন রয়েছে। তবে অতিবৃষ্টির কারণে পানি নিষ্কাষনের প্রধান খালটিতে পানি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ধীরগতিতে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালি ৪ লেন রাস্তা নির্মান করতে গিয়ে কুমিল্লার ৭০ শতাংশ পানি নিস্কাশনের প্রধান খাল টমছমব্রীজ থেকে কচুয়া চৌমুহনী পর্যন্ত কান্দিখালটি ভরাটই বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। তবু নগরবানীর কথা চিন্তা করে দ্রুত পানি নিষ্কাষনের জন্য ১৩০ জন কর্মী কাজ করছে।