কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান না থাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। এতে শহরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক দেশি-বিদেশি সংস্থার পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেশের প্রাচীন এ শহরটি ২০১১ সালে নগরের মর্যাদা লাভ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো কিছুতেই নেই পরিকল্পার ছাপ। এ নগরীর জন্য বড় অঙ্কের বরাদ্দ ও অসংখ্য প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও নাগরিকদের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান মিলছে না। নগরবাসী যথাযথ কর পরিশোধ করলেও পাচ্ছেন না ন্যূনতম নাগরিক সেবা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুমিল্লা শহরকে সুশৃঙ্খল নগর হিসাবে গড়ে তুলতে কিছু পরিকল্পনা কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নগরে প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল, যানবাহন ও জনসংখ্যা হুহু করে বাড়লেও বাড়ছে না নগর সড়ক। নেই পর্যাপ্ত ভূ-উপরিস্থ ড্রেনেজ ও ভূগর্ভস্থ স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা। এটি প্রভাব ফেলছে নগরীর সামগ্রিক পরিবেশের ওপর। নেই ময়লা-আবর্জনা ফেলার পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। নগরীর আয়তনের তুলনায় সড়ক কম হওয়ায় দিনের বেলায় রিকশা, বাস, অটো, ইজিবাইক ও পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে সচেতন মহলের সমালোচনা সত্ত্বেও অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না। এতে আগামী ১০ বছরের মধ্যে কুমিল্লা নগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সম্প্রতি ইউএসএআইডির সহায়তায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত স্ট্রেন্দেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পের আওতায় এক কর্মশালায় এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জনসম্পৃক্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর অ্যাডভোকেসি কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মশালায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতা ও তরুণরা ৫টি দলে বিভক্ত হয়ে তাদের মতামত লিখিত উপস্থাপন করেন। এছাড়া মাদকের ভয়াবহতা ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল সুষ্ঠু ধারার গণতন্ত্র চর্চায় ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে ও ২০১৮ সাল থেকে কুমিল্লায় কাজ করছে। এর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় জনসম্পৃক্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর অ্যাডভোকেসি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয় সুধী সমাজ। অন্যথায় অপরিকল্পিত নগরের গ্লানি নিয়ে টেকসই উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পরিকল্পিত নগরায়ণের মধ্য দিয়ে দেশের প্রাচীন শহর কুমিল্লা উন্নত নগরীতে রূপান্তরিত হোক এমন প্রত্যাশা শহরবাসীর। এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম বলেন, আমরা পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে রেখেছি। এটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, পরিকল্পিত নগর বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়েরও সহযোগিতা প্রয়োজন।