ঢাকাসোমবার , ১৩ নভেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টির দলছুটদের নিয়ে তৃতীয় ধারা সৃষ্টির ফর্মুলা?

অনলাইন ডেস্ক :
নভেম্বর ১৩, ২০২৩ ৮:১১ অপরাহ্ণ । ৮০ জন

নির্বাচনের আগে আবার রাজনীতিতে ওলটপালট ঘটানোর ফর্মুলা আবিষ্কৃত হয়েছে। সুশীল সমাজের টেবিলে আবিষ্কৃত এই ককটেল ফর্মুলা এখন কূটনৈতিকপাড়া ঘোরাফেরা করছে। আওয়ামী লীগের কিছু দলছুট নেতা, বিএনপির তারেক বিরোধী কিছু নেতা এবং জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশের সমন্বয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ গঠনের নীরব প্রক্রিয়া চলছে। এই ফর্মুলার আবিষ্কারক এক-এগারোর কুশীলব সুশীল সমাজের কেউ কেউ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ফর্মুলা নিয়ে এখন কূটনীতিকপাড়ায় সরগরম। আগামী নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে একটি অরাজনৈতিক সরকারকে ক্ষমতায় আনা এবং অরাজনৈতিক সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ভাবনা থেকেই এই ধরনের চিন্তা এসেছে বলে একাধিক রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছু কিছু নেতা আছেন যারা পরিত্যক্ত, বিভ্রান্ত বিভিন্ন কারণে তারা হতাশাগ্রস্ত, যারা এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন এরকম মাইনাস ফর্মুলার উদ্যোক্তা কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কয়েকটি দূতাবাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং তারাও আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তাদের বিভিন্ন হতাশা বিশেষ করে দলের ভিতরে অপাংক্তেয় গুরুত্বহীন হয়ে যাওয়া নিয়ে তাদের বেদনার কথা বলছেন। এদেরকে নতুন রাজনৈতিক দলের টোপ দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির মধ্যে একটি বড় অংশ আছেন যারা তারেক বিরুদ্ধে এবং তারেকের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল পরিচালনাকে সমর্থন করেন না, তারেকের বিরুদ্ধে যারা দলের ভিতরে ক্ষুব্ধ, যাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ। এই তিনটি দলের সমন্বয়ে একটি ভদ্রলোকের সুশীল সমর্থিত রাজনৈতিক দল গঠন করার জন্য একটি উদ্যোগ খুব স্পষ্ট ভাবে দানা বেঁধে উঠছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই সমস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কেউ না কেউ যোগাযোগ করেছেন এবং তাদেরকে টোপ দেওয়া হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন ব্যক্তির সঙ্গে এই প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। এদের তিনজনই সংস্কারপন্থী। বর্তমানে তিনজনই এমপি। এরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দেননি। তবে তাদের মধ্যে অন্তত একজন বলেছেন যে, আমি জীবন সায়াহ্নে এসে উপস্থিত হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ হিসাবে আমি যেতে চায়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এই উদ্যোগের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যুক্ত এবং জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির মধ্যে থেকে মেজর হাফিজ ইতোমধ্যেই তার পৃথক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আরও কয়েকজন নেতা আছেন যারা  যে কোনো সময় এই প্রক্রিয়ার মেরুকরণ চূড়ান্ত হলে প্রকাশ্য হতে পারেন।

 

আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির বাইরেও কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা আছেন, যারা সুশীলদের আদরের এবং সুশীল সমাজের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করে টিকে আছেন তারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। এরকম একটি উদ্যোগে তখনই বাস্তবায়িত হবে যখন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা হবে।

 

ইতোমধ্যে সংলাপের মুলা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং শর্তহীন সংলাপের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে আগে এই সংলাপের আয়োজনকে অনেক একটি নাটক হিসেবে অভিহিত করছেন। অনেকে বলছেন যে নির্বাচন বানচাল করার জন্যই সংলাপের ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে যেন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং সাংবিধানিক একটি শূন্যতা এবং সংকট তৈরি হয়। এরকম একটি সংকটের প্রেক্ষিতে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনা এবং অনির্বাচিত সরকারকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমর্থন দেওয়ার জন্য সুশীল সমর্থিত একটি ককটেল পার্টি একটি জগাখিচুড়ি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরির প্রক্রিয়া আস্তে আস্তে ডানা মেলতে শুরু করেছে। তবে দেখার বিষয় যে যারা বিভিন্ন সুবিধাবাদী রাজনীতির সঙ্গে অভ্যস্ত তারা এই ধরনের উদ্যোগের শেষ পর্যন্ত সায় দেয় কিনা। বিশেষ করে এক-এগারোর অভিজ্ঞতার পর এ ধরনের রাজনৈতিক দিগবাজি দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকজন এগিয়ে আসবে সেটাই বড় প্রশ্ন।